নেপালের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি
এবার বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুকরণে পালিয়ে গেলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। অনলাইন এনডিটিভি এ খবর দিয়েছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, তিনি কাঠমান্ডুতে একটি হেলিকপ্টারে উঠছেন। এর গন্তব্য কোথায় তা পরিষ্কার নয়। তিনি দেশ থেকে নিরাপদে বের হওযার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তাও চেয়েছেন।
জানা যায়, জেন-জিদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। তার সহকারী প্রকাশ সিলওয়াল এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পদত্যাগের আগে তিনি দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে ফোনালাপ করেন এবং তার আহ্বানেই পদত্যাগ করেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে বলছে, সেনাপ্রধান জেনারেল অশোক রাজ সিগদেল প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলিকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।
অফিশিয়াল সূত্রে জানা গেছে, অলি সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং দেশের ক্রমাবনত পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।
এর জবাবে জেনারেল সিগদেল বলেন, সেনাবাহিনী কেবল তখনই হস্তক্ষেপ করে দেশকে স্থিতিশীল করতে পারবে, যদি প্রধানমন্ত্রী অলি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন।
সেনা সূত্র আরও জানায়, অলি পদত্যাগ করলেই সেনাবাহিনী দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুত।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী তার বাসভবন ‘বলওয়াটার’ থেকে নিরাপদে বের হওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন এবং দেশত্যাগের পরিকল্পনাও করছেন।
সূত্র বলছে, অলি চিকিৎসার অজুহাতে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন এবং বেসরকারি বিমানসংস্থা ‘হিমালয়া এয়ারলাইনস’কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অলি নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রীদের সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে তাদের বাসভবন থেকে বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ইতিমধ্যে অন্তত পাঁচটি হেলিকপ্টার এই কাজে নিযুক্ত হয়েছে। কাঠমান্ডু, ললিতপুর ও ভক্তপুরে কারফিউ জারি থাকা অবস্থায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কাঠমান্ডুর দক্ষিণে অবস্থিত ভৈশেপাটির মন্ত্রী আবাসন এলাকা থেকে প্রায় এক ডজন সেনা হেলিকপ্টার কাঠমান্ডু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরঅভিমুখে রওনা হয়েছে, যেখানে মন্ত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এই মুহূর্তে বিমানবন্দরটি এক উত্তেজনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে সমর্থকদের আহ্বান জানাচ্ছেন বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে।
তারা আতশবাজি ফোটানো, ড্রোন ওড়ানো এবং বিমানের দিকে লেজার লাইট দেওয়ার মতো কাজ করতে কাজ করতে উৎসাহিত করছেন।
কাঠমান্ডু পোস্ট বলছে, পার্লামেন্ট ভবন সহ গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে নিরাপত্তা রক্ষায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সামরিক ব্যারাকে নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।
কেপি শর্মা ওলি সেখানে তার মন্ত্রীদের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তবে আরেক গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তা হলো, ওলি পদত্যাগ করার ফলে ক্ষমতা থাকছে কার হাতে।
কেউ কেউ বলছেন, ক্ষমতা নিয়ে নিতে পারে সেনাবাহিনী। তবে এমন দাবির পক্ষে বিশ্বস্ত কোনো সমর্থন মেলেনি। নিশ্চিত করে বলা যায় না আসলেই কি ঘটছে। এর আগে কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।
তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্টের বাসভবন, মন্ত্রী-এমপিদের বাসভবনে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠা জনতা আগুন ধরিয়ে দেয়ার পুরো নেপাল যেন আগুনে জ্বলছে এমন এক আবহ তৈরি হয়। সঙ্গে পার্লামেন্ট ভবন সহ বিভিন্ন স্থানে আগুনের শিখা।
এসব দেখেই কেউ কেউ বলতে থাকেন, ওলির সামনে কোনো বিকল্প নেই। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে। তিনি অবশেষে তা-ই করলেন। তবে অনেক দেরি করে ফেলেছেন।
তার চেয়ে বড় বিষয় হলো পদত্যাগ করার পর তিনি এখন কোথায়? জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন।
অবশ্য দেশের ভিতর তার জন্য অবস্থান করা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। তার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দৃশ্যত, নিজ দলের নেতারাও এখন সুযোগ বুঝে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
ফলে তিনি দেশে কার আশ্রয়ে থাকবেন! যদি দেশ ছেড়েই যান, তাহলে কোথায় আশ্রয় চাইতে পারেন- এমন অনেক প্রশ্ন এখন। এ মুহূর্তে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব না।